অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আকাইদ | NCTB BOOK

খাতামুন অর্থ শেষ বা সমাপ্ত। আর নবুওয়াত অর্থ পয়গম্বারি, নবিগণের দায়িত্ব ইত্যাদি। সুতরাং খতনে নবুওয়াতের অর্থ নবুওয়াতের সমাপ্তি। খাতামুন শব্দের অন্যতম অর্থ সিলমোহর। সিলমোহর লাগানোর পর তাতে কিছু প্রবেশ করানো যায় না। নবুওয়াতের সিলমোহর হলো নবুওয়াতের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘোষনা। নবুওয়াত তথা নবি-রাসুল আগমনের এ ক্রমধারার সমাপ্তিকেই খতমে নবুওয়াত বলা হয়। আর যার মাধ্যমে নবুওয়াতের ধারার সমাপ্তি ঘটে তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়িন বা সর্বশেষ নবি। আমাদের প্রিয়নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বশেষ নবি ও রাসুল

মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা'আলা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেন। দুনিয়াতে আগমনকারী সব নবি-রাসুলই কোনো বিশেষ গোত্র, বিশেষ দেশ এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন সারা বিশ্বের সকল মানুষের নবি। নবি আগমনের ক্রমধারা শুরু হয় হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আর হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের মাধ্যমে শেষ হয়। সুতরাং তিনিই সর্বশেষ নবি ও রাসুল। তাঁর পরে আর কোনো নবি নেই। তাঁর পরে আজ পর্যন্ত কোনো নবি আসেননি। কিয়ামত পর্যন্ত আসবেনও না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বশেষ নবি ও রাসুল

মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা'আলা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেন। দুনিয়াতে আগমনকারী সব নবি-রাসুলই কোনো বিশেষ গোত্র, বিশেষ দেশ এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন সারা বিশ্বের সকল মানুষের নবি। নবি আগমনের ক্রমধারা শুরু হয় হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আর হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের মাধ্যমে শেষ হয়। সুতরাং তিনিই সর্বশেষ নবি ও রাসুল। তাঁর পরে আর কোনো নবি নেই। তাঁর পরে আজ পর্যন্ত কোনো নবি আসেননি। কিয়ামত পর্যন্ত আসবেনও না।

আল-কুরআানের দলিল

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা'আলা সরাসরি মহানবি (সা.)-কে খাতামুন নাবিচ্ছিন বা সর্বশেষ নবি বলেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন-

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّنَ 

অর্থ: 'মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবি।' (সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪০)

হাদিসের দলিল

খতমে নবুওয়াত প্রমাণে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মহানবি (সা.) বলেন

أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّنَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي

অর্থ: 'আমিই শেষ নবি। আমার পরে আর কোনো নবি নেই।' (তিরমিযি)

 অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'রিসালাত ও নবুওয়াতের ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার পর আর কোনো নবি ও রাসুল আসবে না'। (তিরমিযি) নবি কারিম (সা.) আরো বলেন, 'বনি ইসরাইলে নবিগণই নেতৃত্ব দিতেন। যখনই কোনো নবি ইন্তেকাল করতেন তখনই পরবর্তী নবি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পর আর কোনো নবি আসবে না।' (বুখারি) অন্য এক হাদিসে মহানবি (সা.) বলেছেন, 'অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। তারা প্রত্যেকেই নবি হওয়ার দাবি করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবি। আমার পর আর কোনো নবি আসবে না'।

(আবু দাউদ) অন্য একটি হাদিসে মহানবি (সা.) উপমার মাধ্যমে খতমে নবুওয়াত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিগণের দৃষ্টান্ত হলো এমন যে, এক লোক একটি দালান নির্মাণ করল। খুব সুন্দর ও লোভনীয় করে তা সজ্জিত করল। কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান ফাঁকা ছিল। লোকজন দালানটির চারদিকে ঘুরে এর সৌন্দর্য দেখছিল আর বিস্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল- 'এ কোণে একটি ইট রাখা হয়নি কেন? বস্তুত আমিই সে ইট এবং আমিই শেষ নবি।' (বুখারি)।

উপমার মাধ্যমে বর্ণিত হাদিসসমূহ থেকে এ কথা সহজেই বুঝা যায় যে, মহানবি (সা.) হলেন নবুওয়াতের দালানের সর্বশেষ ইট। তাঁর মাধ্যমেই পরিপূর্ণ হয়ে গেল নির্মাণকাজ। ফলে নতুন করে দালানে আর ইট লাগানোর প্রয়োজন পড়বে না। অর্থাৎ তিনিই সর্বশেষ নবি ও রাসুল।

যৌক্তিক প্রমাণ

আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত সকল কিছুরই শুরু এবং শেষ আছে। তাই নবুওয়াতেরও শুরু এবং শেষ আছে। এক নবির পর অন্য নবি আসার কতগুলো যৌক্তিক কারণ থাকে। যেমন-
১. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা যদি কোনো বিশেষ সম্প্রদায় বা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট হয়।
২. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষায় যদি নতুন কিছু সংযোজন-বিয়োজন প্রয়োজন হয়।
৩. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা যদি বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে যায়।

মহানবি (সা.) এর নবুওয়াতের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত কারণগুলোর কোনোটিই প্রযোজ্য নয়। কেননা, মহানবি (সা.) কোনো বিশেষ সম্প্রদায় বা সময়ের জন্য আসেননি। বরং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের নবি। আল্লাহ তা'আলা বলেন

وَمَا أَرْسَلْنَكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا

অর্থ: আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সুরা সাবা, আয়াত: ২৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে দ্বীন (ইসলাম) পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। এতে কোনোরূপ সংযোজন-বিয়োজনেরও প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَنِي

وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا 

অর্থ: 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।' (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩)
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি এবং রাসুল। তাঁর পরে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না এবং আসার কোনো প্রয়োজনও নেই। তারপরে যদি কেউ নবুওয়াতের দাবি করে সে মিথ্যাবাদী, ভণ্ড ও প্রতারক।
আমরা খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করবো। এতে বিশ্বাস করা ইমানের অপরিহার্য অংশ। আমরা আমাদের জীবনের সর্বাবস্থায় মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করে চলবো।

জোড়ায়/দলগত কাজ ও উপস্থাপন

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা জোড়ায় আলোচনা করে উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে আল-কুরআন ও হাদিসের বাণীসমূহ ছোট কাগজে অর্থসহ লিখ।
মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ নবি।

 

Content added By

Promotion

Promotion